আল-মামুন,খাগড়াছড়ি:: জেলা সম্মেলনে পদ প্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়ি। আগামী ২৪ নভেম্বর ১৯ রবিবার সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি আউটার স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামীলীগে কে আসছে নেতৃত্বে তার সমীকরণ নিয়েও শেষ নেই জল্পনা-কল্পনার। পার্বত্য এ জনপদে সম্মেলন পরবর্তী জেলা কমিটিতে উল্লেখ যোগ্য পদ-পদবীতে পরিবর্তনের পাশাপাশি রাজনীতির নতুন মেরুকরণে কার কোপাল পুড়ছে কেবা ভাগ্যবান তাই এখন দেখার পালা।
এ সম্মেলনে সভাপতি পদে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা ও খাগড়াছড়ির সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহিস উদ্দিন উল্লেখ যোগ্য। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে-খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী,শিক্ষা ও মানব সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার,সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান,সাংগঠনিক সম্পাদক আ:জব্বার,মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র মো: শামসুল হক। ইতি মধ্যে ব্যানার বিলবোর্ড ও প্রচারপত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের নাম।
বিগত ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৮ বছরের মাথায় আগামী ২৪ নভেম্বর সম্মেলনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে নানা কৌতুহল-শঙ্কা। তবে প্রার্থীদের নিয়েও মুখোরোচক গল্প আলোচনার পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় জেলা শহরের ছাড়িয়ে উপজেলার অলিগলি ছড়িয়ে পড়েছে। এ যেন ব্যানার-বিলবোর্ডের নতুন এক খাগড়াছড়ি। ইতি মধ্যেই গঠন করা হয়েছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও।
এ সম্মেলনকে ঘিরে আনন্দের বার্তার পাশাপাশি আশা-হতাশার চিত্রের মধ্যেও জেলা কমিটির শীর্ষ পদের বিভোর স্বপ্নে দিন কাটাচ্ছেন অনেক সুভিধাবাদীরা। তবে সবেই চলছে নীরবে। এরই মধ্যে সারাদেশে মত যোগ্য নেতা বাছাইয়ের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি হাইব্রীট,অনুপ্রবেশকারীদের শর্তকতার সাথে পাহাড়ি এ জেলায় সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসবে এমটাই প্রত্যাশা শীর্ষ নেতা ও স্থানীয়দের।
মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার পাশাপাশি সংগঠনিক ভাবে খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির ৭৫ সদস্য এবং ২১জন উপদেষ্টার অনেকেই নিস্ক্রিয় হওয়ার সুযোগে সক্রিয়রাই নেতাকর্মীদের মনে স্থান করে নিয়েছে কাজের গুণে। দলের নেতৃত্বে মাঠে শক্ত অবস্থানে হালধরা,বুদ্ধি বিবেচনা ও সাংগঠনিক দক্ষতায়ও এগিয়ে তরুণ নেতারাই।
৯ উপজেলা নিয়ে গঠিত খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কোন পদ্ধতিতে নেতা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সভাপতি-সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ এ পদ কার ভাগ্যের কড়া নাড়ছে তা এখনো কল্পনার রাজ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে।
সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক,সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক হানিফ এমপি,সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এমপি,সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি,কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি,উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়াসহ গুরুত্বপূন্য ব্যক্তিরা এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের বিভাগীর সম্মেলনে জেলা কাউন্সিলের এ সময় নির্ধারিত হয়।
অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বে বিগত দিনে আস্থার ঠিকানা গড়ে তোলায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সভাপতি পদে নেতৃত্বের যোগ্যতায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের বৃহৎ একটি অংশ তার অনুসারী। তাই সভাপতি পদে শক্ত অবস্থান রয়েছে বর্তমান সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাই। প্রতিদ্বন্দ্বীতার মাঠে সভাপতি বাকী দুজনও জয়ের লক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।
সভাপতি-সম্পাদক দুটি গুরুত্বপুর্ণ পদ ও যোগ্য প্রাপ্তি জেলা আওয়ামীলীগের হাল ধরবেন প্রত্যাশা করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, আমি বিগত ৪ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি দলকে সু-সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে কাজ করে আসছি। গ্রহণযোগ্য মনে করলে দলের নেতাকর্মীরা চাইলেই আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে পারবো। এ সময় তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানান। সে সাথে হাইকমা-ের উপস্থিতিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় সন্নিকটে এবং ২৪ নভেম্বর জেলা সম্মেলন সুন্দর ও সফল ভাবে সমাপ্ত হবে বলে প্রত্যাশা করেন।
এদিকে সাধারন সম্পাদক পদে জেলার পাশাপাশি ব্যানার বিলবোর্ড ও প্রচারনায় তুঙ্গে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক দিদারুল আলম দিদার এর নাম। তিনি খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম ও জাহেদুল আলমের ছোট ভাই। দিদারুল আলম দিদার জেলাজুড়ে সুখে-দু:খে নেতাকর্মীদের পাশে থাকা কর্মীবন্ধন ত্যাগী নেতা,মানবতার ফেরিওয়ালা ও জননন্দিত নেতা হিসেবে পরিচিত। জন সমর্থনেও তার রয়েছে খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বৃহত একটি অংশ।
সাধারন সম্পাদক প্রার্থী দিদারুল আলম দিদার বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী ও সংগঠনের স্বার্থে কর্মীবান্ধন নেতার বিকল্প নেই। তাই সাংগঠনিক ভাবে সম্মেলনে নেতাকর্মীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলেই সংগঠন এগিয়ে যাবে।
খাগড়াছড়ির জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আওয়াামীলীগকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী ও জননেত্রীর দেশ সেবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে দলের স্বার্থই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে সবার উপরে মন্তব্য সিনিয়র নেতাকর্মীদের।
সফল ভাবে সম্মেলন সম্পন্নের প্রত্যাশা করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোয়াই অং মারমা বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব সকল বিষয় বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে।