নুরুল আলম:: পার্বত্য চট্টগ্রামে বেপরোয়া কাঠ পাচারের ফলে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে দলীয় প্রভাবে পাচারসহ অনিয়মের মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতিসহ দলীয় প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরতদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও উত্তরের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও তার সঠিক কোনো সমাধান পাচ্ছে না পার্বত্যবাসী।
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীকে বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাখলেও, রাখা হয়েছে অকার্যকর হিসেবে। যেভাবে কাঠ পাচার হচ্ছে তাতে দেশে সরকার আছে বলে মনে হয় না বলে আখ্যায়িত করছে স্থানীয়রা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আমলে সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ কাঠ পাচার চলছে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে কাঠ পাচারে চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাতেই পাচারকারীদের কাঠ পাচারের নিরাপদ সময় হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে তারা। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বোঝাইকৃত অবৈধ কাঠের গাড়ির উপরি ভাগে বিভিন্ন কাঁচামাল বোঝাই করে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পাচার অব্যাহত রেখেছে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো।
খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম-ঢাকা, কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার ঘনফুট প্রতি মাসে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট সমান কোটি কোটি টাকার কাঠ পাচার হচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পরীক্ষণ ফাঁড়িগুলোর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বিকল্প সড়ক পথে ও কাঠ পাচার চলছে অবাধে। জেলার রামগড়, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষীছড়ি ও খাগড়াছড়ি চক্রটি তাদের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব উপজেলা গুলো থেকে চট্টগ্রাম ও ফেনী হয়ে ঢাকায় কাঠ পাচার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরদিকে যোত পারমিট দিয়ে বৈধভাবে কাঠ নিলে তাতেও টিপির ছাড়পত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই করে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারী চক্রটি। চোরাই কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র অবৈধভাবে সরকারি বনাঞ্চলের বন বাগান উজার করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, জোত পারমিট দিয়ে বৈধভাবে কাঠ নিলে তাতেও টিপিরছাড় পত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারী চক্রটি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন বাগান নিধন করে পরিবহণ শ্রমিকের মাধ্যমে পাহাড়ি চোরাই রাস্তা দিয়ে চোরাই আড়তে মজুদ করা হয়। পরিবেশবাদীরা জানান সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বাঁধাহীনভাবে কাঠ পাচার হওয়াতে পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পড়ছে। কাঠ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বনভূমি উজাড় হয়ে যাবে।
পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এলাকায় ৬ লক্ষাধিক একর বনাঞ্চল ৫০ শতাংশ বৃক্ষশূন্য ও ভূমি বেদখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। পার্বত্য অঞ্চলের উপজেলাগুলোতে গাছ কেটে সমতল জেলায় পাচার করা বন ধ্বংসের প্রধান কারণ। এছাড়াও অবাধে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও ফসলি জমি নির্মাণসহ একাধিক বিষয় বন ধ্বংসের জন্য দায়ী। পাচাররোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জীববৈচিত্রের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন মহাপরিকল্পনা ১৯৯৩-২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশের ২০ শতাংশ ভূমি বনায়ন করার কথা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে পার্বত্য এলাকায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন ১৯৭৪-এর ২৩ এবং ২৪ ধারা পার্বত্য অঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে পারেন। ১৮৭০ খ্র্রি: নির্ধারিত ১ লাখ ৮৫ হাজার একর রির্জাভ ফরেস্টের বন জীববৈচিত্র্যের ভূমি রক্ষায় আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দরকার। এ জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
টিপি ও ছাড়পত্রের সাথে ট্রাকে বোঝাই মালামালের অধিকাংশ গরমিল থাকে। তার জন্য বিভিন্ন স্থানে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কাঠ বোঝাই ট্রাকটি গন্তব্য স্থলে যেতে হয়।
জানা যায়, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ১১ মাইলের মাহবুব নগর এলাকায় আলী আকবর ভুঁইয়ার বিশাল বাগানের মূল্যবান গাছ জোতের কাগজপত্র দেখিয়ে কেটে অন্যত্র পাঁচারের মহোৎসবে নেমেছে কাঠ পাচারকারী চক্র।
২০ নভেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় কাঠ পাঁচারের উদ্দেশ্যে ট্রাক বোঝাই করা হলে সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে গেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। সম্প্রতি কয়েক ধাপে ট্রাকে করেও একই স্থান থেকে কাঠ পাঁচার করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রামগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা সাথে কথা হলে তিনি জানান, সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা জোত পারমিটের কাজ করেছে। আমি গত জুলাই মাসে যোগদান করেছি। অনিয়মের বিষয়টি অবগত হয়েছে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। কাঠ পাচার সংক্রান্ত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও প্রশাসনিক ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
অপরদিকে, জোত পারমিটের মালিক জানান, কিছুদিনে আগে একটি জোত পারমিট করেছিলাম। যাহাতে বিভিন্ন জাতের কাঠ ছিল তাতে পরিমানে কম বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাছের সংখ্যা পরিমানে বৃদ্ধি করে জোত পারমিটের কাগজপত্র দেখানোর ফলে বাহির থেকে বাগান কিনে টিবি ও ছাড়পত্রের সাথে সমন্বয় করে কাঠ গুলো নিতে হচ্ছে। যার ফলে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে হচ্ছে। এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। কারন লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছি তা পুসিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। জোত পারমিটের ফলে লাভবান হচ্ছে ইউপিডিএফ(সংস্কার), জেএসএস, ইউপিডিএফ স্থানীয় এক শ্রেনীর চাদাঁ আদায়কারী সেন্ডিকেট।
Leave a Reply