আজ ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

পাহাড়ে আনারসের বাম্পার ফলন


নুরুল আলমঃ পাহাড়ে অঞ্চলে অতুলনীয় স্বাদে হানিকুইন জাতের আনারস। রসালো এই আনারসের বিশেষভাবে দেখা মেলে পার্বত্যঞ্চলে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি বিভিন্ন উপজেলায় লোকমুখে বলতে শোনা যায় আনারসের রাজধানী হিসেবে পার্বত্য অঞ্চল।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত বারের তুলনায় বাম্পার ফলন হয়েছে আনারসের। পাহাড়ে পাহাড়ে পেঁকে আছে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের আনারস। ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। তবে দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আনারসে বেশ ভাল ফলন ফলেছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে। আকারেও বেশ বড়। কিন্তু ফলের আকার অনুযায়ী তেমন দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফলন অব্দি ১৮ মাসে খরচ হয় ৬-৮টাকা। আবার ফসল কেটে লোডিং পয়েন্টে আনতে খরচ পড়ে অবস্থানভেদে ২ থেকে ৩টাকা। ফলে ১০ টাকা থেকে ১২/১৪ টাকা হরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষককে গুনতে হয় লোকসান।
স্থানীয় চাষিরা জানায়, সারা বছর কষ্ট করে মধুফল (আনারস) উৎপাদন করে থাকে তারা। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজ নেয়না। পার্বত্য তিন জেলায় কোনো প্রকার হিমাগার না থাকায় বেকায়দায় পড়ছে পার্বত্য অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। যদি পার্বত্য অঞ্চলে হিমাগার, জুস ফ্যাক্টরি বা আনারস চাষিদের আধুনিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে সাধারণ চাষিদের জীবন মান উন্নয়ন হবে।
জানতে চাইলে আনারস চাষি লিয়াকত জানান, কাঠ ফাটা রৌদে আর বৃষ্টিতে ভিজে ১৮ মাস পরিশ্রমের পরে একটা আনারস পাওয়া যায়। ১০-১২ টাকা একটা আনারস বিক্রি করতে না পারলে দুঃখের আর শেষ থাকেনা।
খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার ফলন দেখে চাষিরা খুশিতে ছিল। কিন্তু ইদানিং বাজার খারাপ (আনারসের দাম) যাচ্ছে। গাড়ি ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি ও অন্যান্য খরচসহ সার্বিকভাবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকশানে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। অন্যান্য বছরের তুলনায় লাইন খরচ ১০-১২ হাজার টাকা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রমজান মাসে বাড়ছে আনারসের চাহিদা। ফলে আশা করা যায় চাষিদের দুদর্শা কিছুটা ঘুচবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানায়, আঞ্চলিক দলগুলোর চাঁদা, বাড়তি গাড়ি ভাড়া ও এলাকার বাজার গুলোতে সারের বাড়তি দামসহ নানা কারণে চাষিদের আনারস উৎপাদন এবং বাজারজাত করণে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা দাম কম পাচ্ছে না বলেও জানান এই কৃষক।
খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যাওয়ার পথে নানিয়ারচর উপজেলায় আনারসের ব্যপক ফলন দেখা যায়। নানিয়ারচর উপজেলায় মোট ১৩শত হেক্টর জমিতে এবার আনারসের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলনও বেশি। কম খরচে লাভজনক ফলন পাওয়া যায় বিধায় দিন দিন বাড়ছে এই চাষ। প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রতিবছর ফলন বাড়ছে। আনারস চাষ লাভজনক হলেও উৎপাদন খরচ অনুপাতে বিক্রি করতে না পারলে চাষিরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়ে।
কৃষিকর্মকর্তা জানান, এক সাথে পাহাড় জুড়ে আনারসে পাক ধরলে চাষিদের একটু বেকায়দায় পড়তে হয়। তখন দ্রুত বাজারজাত করতে না পারলে কৃষকের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। আনারস চাষিদের জন্য সরকারি ভাবে কোন প্রকল্প না থাকলেও আমরা স্থানীয় পর্যায়ে চেষ্ট করছি পোষ্ট হারভেষ্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃষকদের সহায়তা করার। যাতে করে চাষিরা আনারস ফ্রিজাপ করে নির্দিষ্ট সময়ে বাজারজাত করতে পারে। তথ্য সেবা, দিকনির্দেশনা ও চাষে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহারে সেবা দিয়েও চাষিদের পাশে থাকার কথা জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরোও..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরোও..
error: Content is protected !!