নিজস্ব প্রতিবেদক:: পার্বত্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ কায়দায় পাহাড় কেটে, বনের কাঠ পুড়িয়ে অবৈধভাবে চলছে ২শতটির অধিক ইটভাটা। কৃষিজমি, জনবসতি, প্রাকৃতিক ও সামাজিক বন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই ইটভাটাগুলো।
বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, “তিন পার্বত্য জেলায় ইটভাটার অনুমতি না দিতে ২০০৮ সালে পরিপত্র জারি করা হয়। বান্দরবানে কোনো ইটভাটার অনুমতিপত্র দেওয়া হয় না। জেলায় বৈধ কোনো ইটভাটা নেই। তবে জেলার ভাটার মালিক শর্তসাপেক্ষে ভাটা পরিচালনার জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছেন।”
এই কর্মকর্তা বলেন, “পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই বান্দরবানে বিশেষ করে নিষিদ্ধ এলাকা ও পাহাড়ের পাদদেশে, আবাসিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় এই অবৈধ ভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি কাঠ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ধারা লঙ্ঘনের কারণে এই অবৈধ ইটভাটাগুলোতে শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘বান্দরবান সদর ইউনিয়নের রেইচা, রেইচা মাঝের পাড়া, মংসাচিং কারবারি পাড়া, লম্বা ঘোণা পাড়ার ইটভাটাগুলো চালু হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, ভাটার বড় বড় গাড়ির আওয়াজে তারা সারারাত ঘুমাতে পারেন না। এছাড়াও ভাটা সংলগ্ন স্কুলগুলো ধুলাবালি ও চুল্লির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
থানচি উপজেলায় দেখা যায়, পূর্বে থানচি হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণে পাড়ার বৌদ্ধ বিহার, পশ্চিম হেডম্যান পাড়া ও উত্তরে থানচি উপজেলা ফায়ার স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় একটি ইটভাটার অবস্থান। হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয, বৌদ্ধ বিহার এবং গ্রামের সঙ্গে ইটভাটার দূরত্ব মাত্র ৫৯ফুট।
অন্যদিকে সরকারি নিদের্শনা অমান্য করেই রাঙ্গামাটি জেলার কউখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবাধে পাহাড় নির্ধন করে এবং কচিঁকাচা গাছ কেটে ইটভাটায় ইটপোড়ানো শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি-ঘাগড়া পরিক্ষণ ভাড়ি অতিক্রম করে বিভিন্ন সরকারি বন থেকে গাছ কেটে কাউখালী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান ইটভাটায় কাঠ জীপ ও ট্রাক দিয়ে পরিবহন করে ব্যবহার করছে।
অপরদিকে ফঠিকছড়ি উপজেলার নারায়ন হাট, নাজির হাট ও হাটহাজারী উপজেলায় পাহাড় কেটে মাটি ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে এবং জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছে বহুবার আবেদন করেও অনুমতিপত্র মিলেনি। তাই নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে অনুমতিপত্র ছাড়াই ইটভাটা চালাতে হচ্ছে।”
ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলার বন বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, ‘পাহাড়ে ইটভাটা স্থাপনের আগে মালিকদের জেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের মাধমে লাইসেন্স বা অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় বনবিভাগকে অবহিত করা হয় না। সে জন্য পাহাড়ে কোথায় কোথায় ইটভাটা স্থাপন হয়েছে তা জানা থাকে না। তারপরও সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংলগ্ন ভাটাগুলোতে মাঝে মধ্যে বনবিভাগ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে থাকে।’ পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন কমিটির জেলা আহ্বায়ক জুম লিয়ান আমলাইয়ের ভাষ্য, ‘পার্বত্য অঞ্চলে ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন না থাকলেও ক্ষমতাসীনরা এসবের তোয়াক্কা করে না। মূলত তারাই এসব ভাটা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত।
Leave a Reply