আজ ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

পার্বত্যাঞ্চল কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আতঙ্ক

“গ্রাম ছেরে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে সাধারণ মানুষ”

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)’র নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে। কেএনএফের ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে। এই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান।

সূত্রে জানা যায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সংগঠনটি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী গত অক্টোবর থেকে পাহাড়ে অভিযান চালান। অভিযানের সময় বান্দরবান জেলার থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি তিন উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।

সম্প্রতি, বম পাড়া নামক স্থানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা সরকারের উন্নয়ন কাজের শ্রমিকের উপর আতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে দুইজন নির্মাণ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও ৪ জন শ্রমিক আহত হয়। এছাড়াও ১২ মার্চ একই স্থান থেকে মোট ২১ জন শ্রমিকসহ ঠিকাদারকে অপহরণ করে এবং দুই দিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া রাস্তায় গাছ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা, সেতুর পাটাতন ভেঙ্গে দেয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয় সংগঠনটি।

স্থানীয়রা জানায়, “৩০ থেকে ৩৫টি গ্রামের মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। জুমের চাষাবাদ ঠিক করে করতে পারছে না। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যদের খাবার জন্য তাদের ঘরের খাদ্য ও গৃহপালিত পশুপাখি দিতে হয়। কখন যে কী হয় বলা খুবই কঠিন। ছেলে মেয়েদের ঠিকমত স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না। আমরাও বাজারে নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। এছাড়া জুমের ও ফলজ বাগানের উৎপাদিত কলা, কাজুবাদাম, আম, হলুদ, তিল, মরিচসহ কোন কিছু ক্রয় বিক্রয় করতে পারছি না”।

তারা আরও জানান, ”কয়েকজন সর্তকতার সাথে থানচি বাজারে পৌঁছলেও পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারছে না। বিশেষ কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে পারছে না তারা। এসব এলাকার লোকজন গ্রাম ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা যায়, বান্দরবানের রুমা উপজেলার ছিলোপি পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল দল কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সদর দপ্তরে অভিযানে গেলে বৃহস্পতিবার (১ জুন ২০২৩) দুপুরের দিকে কেএনএফ সন্ত্রাসী কৃর্তক পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে সৈনিক তুজাম (৩০) মৃত্যুবরণ করেন।

এর আগে সার্জেন্ট হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ১৬ মে ২০২৩ দুইজন সৈনিককে মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি করে হত্যা করা হয় এবং একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেনকে মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি করে আহত করা হয়। এই সকল হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান।

সচেতন মহলের দাবি, অচিরেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অপারেশনে এই সমস্ত দেশদ্রোহী অবৈধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানান এবং সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানচি থানা অফিসার ইনর্চাজ বলেন, ‘পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশকে শান্ত করতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক কথা বলছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকায় শান্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। শীঘ্রই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে’।

এ বিভাগের আরোও..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরোও..
error: Content is protected !!