নিজেস্ব প্রতিবেদক:: হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাঙামাটি। মহালছড়ি উপজেলার বাঙালী মটর সাইকেল চালক সাদিকুল ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার প্রতিবাদে গত ১৯ এপ্রিল রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি জেলায় পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের হরতালের পর পিসিপি নেতা রোমেল চাকমা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগামী রবিবার রাঙামাটি জেলায় দিনব্যাপী অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ।
রাঙামাটির কুতুকছড়িতে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কর্তৃক একটি বাস আটকে ব্যাপক ভাংচুর ও বাসের চালক এবং হেলপারকে মারধরের প্রতিবাদে শনিবার রাঙামাটির সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে রাঙামাটি বাস মালিক ও শ্রমিকরা। আহুত অবরোধে রাঙামাটি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ।অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে রমেল চাকমার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে নিরাপত্তা বাহিনী হেফাজতে দাহ করার প্রতিবাদে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রমেল চাকমা হত্যার প্রতিবাদ কমিটির নেতাকর্মীরা। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে সড়কের উপর গাছের গুড়ি ফেলে এই অবরোধ শুরু করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)র সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমার দাহ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পরিবারের কিছু সদস্যের উপস্থিতিতে দাহ কাজ শেষ করা হয় রমেল চাকমার বাড়ি নানিয়ারচরের বুড়িঘাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব হাতিমারা গ্রামে। ইউপিডিএফ সমর্থিত ৩নং বুড়িঘাট চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসা জানিয়েছেন, বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রমেল মারা যায়। পরে পুলিশ হেফাজতে লাশটি বুড়িঘাটে রাত আটটায় পৌঁছায়। তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল।
পরে লাশটি বুড়িঘাট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার বাবুলের দোকানে লাশ রাখা হয়। পরে সকালে লাশটি রমেলের গ্রামের বাড়ি পূর্বহাতিমারা নিয়ে গিয়ে দুপুরে দাহ করা হয়। সেখানে তার পরিবারের অল্প কয়েকজন উপস্থিত ছিল।৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে বৃষ্টি থাকার কারনে লাশটি আর গ্রামে আনা সম্ভব হয় নি। শুক্রবার সকালে তার তার গ্রামের বাড়ি পূর্বহাতিমারা নিয়ে দুপুরে পরিবারের কিছু সদস্য নিয়ে দাহ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।
নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা ময়নাতদন্ত শেষে রমেল চাকমা লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা জন্য বুড়িঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাই। কিন্তু প্রচুর বৃষ্টি থাকার করানে আমরা তার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারিনি। তবে রমেল চাকমা লাশ যারা চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসে তাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আমরা চলে আসি।
উল্লেখ্য, নানিয়ারচর উপজেলায় দুইটি ট্রাকে আগুন দেবার ঘটনায় অভিযোগে গত বুধবার (৫ এপ্রিল) নানিয়ারচর বাজার থেকে রমেল চাকমাকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। রমেল চাকমা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)র নানিয়ারচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে নিরাপত্তাবাহিনী আটকের পর নানিয়ারচর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রমেল চাকমা বুকে ব্যথা অনুভবের কথা জানালে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) পুলিশ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
রমেল চাকমার মৃত্যুতে রাঙামাটি ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে আগামী রোববার (২৩ এপ্রিল) রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ, মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান ধর্মঘট ও বুধবার (২৬ এপ্রিল) নানিয়ারচর বাজার বয়কটের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটির কুতুকছড়িতে একটি বাস আটকে ব্যাপক ভাংচুর ও বাসের চালক এবং হেলপারকে মারধরের প্রতিবাদে শনিবার রাঙামাটির সকল সড়কে বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে রাঙামাটি বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম বলেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যার সময় খাগড়াছড়ি থেকে আমাদের একটি বাস রাঙামাটি আসার পথে কুতুকছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ এর একদল সন্ত্রাসী বাসটি আটক করে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং বাসের চালক ও হেলপারকে মারধর করেছে।
এর প্রতিবাদে শনিবার আমরা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি,রাঙামাটি-চট্টগ্রাম,রাঙামাটি-বান্দরবানসহ সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখবো। অপরাধীদের গ্রেফতার করা হলে আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেন নেতৃবৃন্দরা। রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হামলাকারীদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।